প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস

বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ঐহিহ্য:
বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বালুখালী গ্রামে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয়। স্থাপনের দিক দিয়ে এটি উখিয়া উপজেলার ৩য় প্রাচীনতম বিদ্যালয়। এটির পূর্বে উপজেলার ১ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ‘পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে এবং ‘উখিয়া বহুমুখী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’ ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়টি স্থানীয় বালুখালী গ্রামের তৎকালীন ইউপি সদস্য, বিশিষ্ট দানবীর, সমাজ সেবক, জুরি বোর্ডের সদস্য এবং বালুখালী গ্রামের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম বুজুরুছ মিয়া (মেম্বার) কর্তৃক তাঁর পিতা মরহুম কাশেম মিয়া’র নামে ‘বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চ’ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থায়নে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের পূর্ব পাশে টিলার উপর মনোরম পরিবেশে বিদ্যালয়টিকে স্থাপন করেন। তিনিই এককভাবে বিদ্যালয়ের নামে ১(এক) একর জোত জমি দান, গৃহ নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের বসার ব্যঞ্চ ও আসবাবপত্র তৈরি, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেয়া সহ বিদ্যালয়ের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করেন। দুরদুরান্তের শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা লাঘবে ছাত্রাবাস নির্মাণ করেন। তখনকার সময় পালংখালী, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়ায় কোন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাথাকায় সেখানকার শিক্ষার্থীরা আবাসিক থেকে অত্র বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী তথা বর্তমানে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। আমৃত্যু তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। উল্লেখ্য ১৯৭১ খিস্টাব্দের ৩১ জুলাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময় দুর্বিত্তের গুলিতে নিজ বাসভবনে তিনি শহীদ হন। তাঁর মৃত্যুতে বিদ্যালয়টি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। ফলে বিদ্যালয়টির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন তথা কলেবর যতটুকু বাড়ার কথা সেটুকু বাড়েনি। প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুতেও যিনি বিদ্যালয়টিকে আকড়ে ধরে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা ও শত-সহস্র প্রতিকূলতায় বিদ্যালয়টিকে টিকিয়ে রাখতে যার অবদান সবচে’ উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন বিদ্যালয়ের সর্বশেষ অবসরগ্রহণকারী (২০০৫ সালে) প্রধান শিক্ষক বাবু চানু চাকমা। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২ মে অত্র এলাকায় সংঘটিত প্রলংকরী ঘুর্ণিঝড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিদ্যালয়ের কাঠের তৈরি গৃহটি ভেঙে অনেক মূল্যবান কাগজপত্র বাতাসে উড়ে যায় ও বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। তারপর প্রতিষ্ঠাতার ছোট ভাই মরহুম মো. ইসলাম (মেম্বার) ও মরহুম আলী হোসেন (মেম্বার) ও তাঁর সহধর্মীনি মরহুমা নুরুন্নাহার বেগমের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও দানকৃত নাল জমিতে বর্তমান স্থানে তথা কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের কক্সবাজার থেকে সড়কের বামদিকে বালুখালী পানবাজারের উত্তর পাশে নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জনাব এডভোকেট আবদুল মন্নান সাহেবের মেধা, শ্রম, আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি তর-তর করে এগিয়ে যাচ্ছে। আর ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি জনাব ফজল কাদের ভুট্টোর অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ের নতুন সাইক্লোন সেল্টার ভবন, খেলার মাঠ, তোরণ নির্মাণ সহ প্রভুত উন্নয়ন সাধিত হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা (০৮ জন এমপিও ভুক্ত) এবং ৩ জন কর্মচারীসহ প্রায় ৫ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। প্রতি বছর পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে বিদ্যালয়টি উপজেলার ৩য় ও ৪র্থ স্থানে থেকে শিক্ষার্থীরা সরকারি বৃত্তি লাভ করে থাকে। এছাড়াও খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে কয়েকবার জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়ে অঞ্চলে খেলার গৌরব অর্জন করে। বর্তমানে বিদ্যালয়টির এ ডায়নামিক নেতৃত্বে রয়েছে প্রধান শিক্ষক বাবু সবুজ সেন-বিএসসি. বিএড.। তার জাদুকরী নেতৃত্বে এত সল্পসংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করে উপজেলার মধ্যে চমৎকার ফলাফল অর্জন করে সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছেন। এই বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমানে জজ, আইনজীবি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক, এবং পুলিশ সহ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কর্মরত থেকে দেশের সেবা করে আসছেন। বিদ্যালয়ে বয়স্কাউট-গার্লগাইড, যুব রেড ক্রিসেন্ট, দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী, যৌন সহিংসতা প্রতিরোধ, বিতর্ক ক্লাব, বেতার শ্রোতা ক্লাব সহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা সুনাগরিক, দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক ও উদার মনের হয়ে গড়ে উঠে। সর্বোপরি এলাকায় শিক্ষার শিখা প্রজ্জ্বলন করে আদর্শ নাগরিক তৈরিতে বিদ্যালয়টির অবদান অত্যন্ত বেশি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

© All rights reserved © 2025 BKHS
Design & Developed BY ShabbirDigital.com